১৬. মুঠো শক্ত করল কিশোর

0 Comments

মুঠো শক্ত করল কিশোর। লড়াই না করে কিছুতেই ধরা দেবে না। হেরে গেলে যাবে, সে পরে দেখা যাবে। কোনমতে নরিসকে কাবু করে ফেলতে পারলেই হলো, বাকি দুজন আর এগোবে না। লেজ তুলে দৌড় দেবে, বোঝাই যায়। নিজের ইচ্ছেয় আসেনি ওরা, নিশ্চয় জোর করে নিয়ে এসেছে নরিস।

তবে বিশালদেহী লোকটাকে কাবু করা অত সহজ নয়। গায়ে যে শুধু মোষের জোর তাই নয়, কি করে ব্যাট ব্যবহার করতে হয়, তা-ও জানে। ধরার কায়দা দেখেই অনুমান করা যায়। এক পা এক পা করে এগোচ্ছে, পেছনে গা ঘেঁষাঘেষি করে আছে তার দুই সহকারী।

সমস্ত দুশ্চিন্তা আর ভয় জোর করে মন থেকে সরিয়ে দিল কিশোর। জুডো ক্লাসে শেখানো হয়েছে এটা করতে। শত্রুর ওপর কড়া নজর, প্রতিটি নড়াচড়া লক্ষ্য করছে। ধীরে ধীরে ভারি দম নিতে লাগল।

কাছে আসতে নরিসদের আরও অর্ধেক পথ বাকি, এই সময় সিড়ির মাথায় আরও দুটো মূর্তি চোখে পড়ল কিশোরের। সঙ্গে সঙ্গে ডাক দিল সে, মুসা, এই সামনের লোকটাই তোমাকে ঘুসি মেরেছিল! পুলে ফেলে দিয়েছিল!

হেসে উঠল নরিস। ওসব পুরানো কৌশল অনেক দেখা আছে আমার। আমি তাকাচ্ছি না পেছনে।

ওরা কথা বলছে, এই সুযোগে নিঃশব্দে নেমে চলে এল রবিন আর মুসা। ঝাপিয়ে পড়ল দুই সেলসম্যানের ওপর। একটা লোকের কানের সামান্য নিচে ঘাড়ের ওপর কারাতে কোপ মারল রবিন। টু শব্দ করতে পারল না লোকটা। হাত থেকে ব্যাট খসে পড়ল। জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেল সে।

অন্য লোকটার ব্যাট ধরা হাতটা চেপে ধরে মুচড়ে পেছনে নিয়ে এল মুসা। হ্যাঁচকা টান দিয়ে ব্যাট কেড়ে নিল বিস্মিত লোকটার হাত থেকে। তারপর সেটা দিয়ে আক্রমণ করল নরিসকে।

বোঝাপড়াটা এই ব্যাটের সঙ্গেই হবে আমার, বলল সে।

চমকটা সামলে নিতে সময় লাগল না নরিসের। চিৎকার করে উঠে ব্যাট তুলল সে, বাড়ি মারল মুসার মাথা সই করে। সেটা ঠেকানোর জন্যে ব্যাট তুলল মুসা। ঠেকালও। তবে ব্যাটটা ধরে রাখতে পারল না, ছুটে গেল। সে যে লোকটার কাছ থেকে ব্যাট কেড়ে নিয়েছিল সে-ও এগিয়ে এল ওকে ধরার জন্যে। রবিন বাধা দিল তাকে।

মুসার দিকে যেই নজর দিয়েছে নরিস, অমনি লাফ দিয়ে আগে বাড়ল কিশোর। তবে টের পেয়ে গেল সেটা বিশালদেহী লোকটা। মুসাকে বাড়ি মেরে তার হাত থেকে ব্যাট ফেলে দিয়েই ঘুরল, সই করার সময় পেল না, কিশোরকে আসতে দেখেই বাড়ি মারল। ঠিকমত লাগাতে পারল না। ব্যাটের মাথা কিশোরের মুখ ছুঁয়ে গেল। তারপর গিয়ে লাগল পুরানো কাঠের রেলিংটাতে। মড়াৎ করে কাঠ ভাঙার আওয়াজ হলো। আরেক কদম এগোল কিশোর। এক হাতে ব্যাট আটকানোর চেষ্টা করতে করতে আরেক হাতে কব্জি চেপে ধরল নরিসের।

কিন্তু ভারি শরীর দিয়ে ধাক্কা মেরে কিশোরকে সিঁড়ি থেকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করল সে। রেলিঙে লেগে ব্যথা পেল কিশোর, উফ করে উঠল। কব্জি থেকে আঙুল ছুটে গেল। রেলিং আঁকড়ে ধরে পতন ঠেকাল।

ব্যাটটা টেনে ছাড়িয়ে নিয়ে হেসে উঠল নরিস। আবার ঘুরল মুসা আর রবিনকে বাড়ি মারার জন্যে। ওদের চিত করেই ঘুরবে কিশোরকে কাবু করার জন্যে।

ওদেরকে নাগালের মধ্যে না পেয়ে আবার ঘুরল কিশোরের দিকে। কিন্তু ওকে যেখানে আশা করেছিল, সেখানে পেল না। তার পরেও বাড়ি মারল। ব্যাটের নিচ দিয়ে ডাইভ দিল কিশোর। মাথা নিচু করে উড়ে এসে পড়ল নরিসের ওপর। মাথা দিয়ে ভীষণ জোরে গুতো মারল পেটে।

হুঁক করে উঠল লোকটা। সামনের দিকে বাঁকা হয়ে গেল শরীর। দুদিক থেকে তাকে ধরে ফেলল মুসা আর রবিন। সাংঘাতিক জোর লোকটার গায়ে। প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছে, তবু দুজনের ধরার সঙ্গে সঙ্গে এক ঝাড়া দিয়ে মুক্ত করে নিল নিজেকে। শুধু মুক্ত করেই ক্ষান্ত দিল না, পাশে ঘুরে ঘুসি মারল রবিনের ঘাড়ে।

যথেষ্ট হয়েছে, বলেই ঝাপ দিল মুসা। গড়াতে গড়াতে পড়ল নরিসকে নিয়ে। গড়ানো থামল যখন, সে থাকল ওপরে।

কাহিল হয়ে পড়েছে নরিস। তাকে টেনে দাঁড় করাল মুসা। হেসে বলল, তোমার ঘুসিতে দারুণ শক্তি, জানা হয়ে গেছে আমার। এবার দেখ তো, আমারটা কেমন লাগে?

বলেই মেরে বসল।

ইতিমধ্যে দ্বিতীয় সেলসম্যানকে কাবু করে ফেলেছে কিশোর। দুজনেই বসে পড়েছে সিড়ির ওপর। হাঁপাচ্ছে পরাজিত কুকুরের মত। মারপিটের বিন্দুমাত্র ইচ্ছেও আর নেই ওদের।

দারুণ, বুঝলে! হাত ঝাড়তে ঝাড়তে কিশোরকে বলল রবিন, শেষ মারটা বড় চমৎকার দিলে। কি মার? জুডো?

মাথা ডলছে কিশোর। ছাই! একজায়গায় ফুলে উঠেছে, সেখানে আঙুলের চাপ দিয়েই উফ করে উঠল। ছাই হোক আর যা-ই হোক, কাজ হয়েছে, নরিসের ওপর প্রতিশোধ নিতে পেরে সন্তুষ্ট হয়েছে মুসা। তোমাদেরকে মারতে এল কেন?

সংক্ষেপে সব জানাল কিশোর। শুনেটুনে মুসা বলল, ভাল। পুলিশকে খবর দেব?

তাতে এই তিনটেকে জেলে ভরতে পারব বটে, কিশোর বলল, কিন্তু গভীর জলের মাছটা ফসকে যাবে। লুই মরগানকে আটকাতে পারব না আমরা।

কেন নয়? জালিয়াতি যে করেছে এটা তো ঠিক?

কমিক বুক জালিয়াতি, হুফার বলল, এই অপরাধে জেলে ঢোকানো যাবে বলে মনে হয় না। উকিলই ভাল বলতে পারবে।

কিন্তু আইন তো ভঙ্গ করেছে সে?

পাবলিশিং কপিরাইট অমান্য করেছে, এটা বলা যায়, কিশোর বলল। এধরনের অপরাধে লোকের শাস্তি হয় বটে, তবে জেলে যায় না। জরিমানা টরিমানা দিয়েই খালাস পেয়ে যায়।

শহর ছেড়ে চলে যাবে সে, ডিকসন বললেন।

দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারে, বলল কিশোর। তাহলে জরিমানাও দিতে হবে না। দেখি, আগে জেনে নিই, কি ধরনের শয়তানি চলছিল এখানে। তারপর বুঝেশুনে কিছু একটা করা যাবে।

ধমক দিতেই যা জানে গড়গড় করে বলে দিল এক সেলসম্যান। এখানে, এই মাটির নিচের ঘরে কমিক বই ছেপে নকল জিনিসটা আসল বলে ধরিয়ে দেয়া হত সংগ্রাহকের হাতে।

ভাল আয় করেছে, হুফার বলল। শ খানেক কমিক ছাপতে ব্ল্যাক অ্যাও হোয়াইটে বড় জোর হাজার দুয়েক ডলার লাগে। প্রতিটি বই কম করে হলেও পঞ্চাশে গছাতে পারবে বোকা সংগ্রাহকগুলোকে। তাতে লাভ থেকে যাবে তিন হাজার। সোজা কথা নয়। লেখক কিংবা আর্টিস্টকে কমিশনের জন্যে একটা পয়সাও দিতে হবে না। লাভ সবটাই নিজের পকেটে পুরতে পারবে প্রকাশক।

কিন্তু সব কিছু বন্ধ করে দিচ্ছে মরগান, কিশোর বলল। প্রেসও বন্ধ করে দিয়ে এখানকার পাট চুকিয়ে চলে যাওয়ার মতলব। তারমানে আরও কোন ব্যাপার আছে। একজন সেলসম্যানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, কি ব্যাপার, বল তো?

আরেক ফন্দি করেছে, লোকটা বলল। এবার কালারে ছাপবে।

কালার? ভুরু কোঁচকাল হুফার। তাতে তো অনেক গল্প। একশো ছাপথেই বেরিয়ে যাবে বারো হাজার! চুরি করে ছাপতে গেলে প্রেস থেকে তো আর পারবে না, নিজেকেই করতে হবে সব কিছু। এসটাবলিসমেন্ট কস্ট অনেক। টাকা পাবে কোথায়?

তাইওয়ান, সিঁড়ির গোঁড়া থেকে জবাব দিল নরিস। হাত-পা বাঁধা হয়ে বসে আছে। চারপাশে তাকাল বিরক্ত চোখে। ওরই মত আরেক শয়তান প্রিন্টারের সঙ্গে ওখানে যোগাযোগ হয়েছে মরগানের, চুক্তিও করেছে। এখানে ছেপে চোরাচালান হয়ে চলে আসবে আমেরিকায়। আপাতত চিনামাটির জিনিসের বাক্সে করে আনার সিদ্ধান্ত নিয়ে মরগান। পুরো উপকুলে ছড়িয়ে দেয়ার ইচ্ছে তার। আমাদের সবাইকে ব্যবসায় লাগাবে বলে লোভ দেখিয়েছিল। টাকার অঙ্ক হিসেব করে দেখিয়েছিল। রাজি না হয়ে পারিনি।

এখন আর কি, কিশোর বলল, জেলে গিয়ে পচুনগে। বেশি লোভ করলে এরকমই হয়।

সেলারেই তিনজনকে বেঁধে ফেলে রেখে বেরিয়ে এল ওরা। দোকানের দরজায় তালা লাগিয়ে দিল। গাড়িতে বসে আছে মিরিনা। এরকম একটা পরিবেশে এভাবে বসে থাকতে ভাল লাগছিল না ওর। ওদের দেখে অস্বস্তি দূর হলো। উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, খবর কি তোমাদের? সব ভাল? চিন্তায়ই পড়ে গিয়েছিলাম। আমাকে বের করে দিল সেলসম্যানগুলো। চুরি করে ঢুকতে হয়েছে তখন মুসা আর রবিনকে।

আমরা ভাল। কি কি ঘটেছে মিরিনাকে জানাল কিশোর। এখন গিয়ে মরগানকে ধরতে হবে, পালানোর আগেই।

কি করে আটকাব? মুসার প্রশ্ন।

ডাকাতির অভিযোগে, সমাধান দিল রবিন। যদি কোনভাবে ওটার সঙ্গে জড়িয়ে ফেলতে পারি ওকে, চোরাই কমিকগুলো খুঁজে বের করতে পারি, তাহলেই হবে।

সন্তুষ্ট হতে পারল না মিরিনা। বলল, অনেকগুলো  যদি এসে যাচ্ছে।

কনভেনশনে ফিরে কোলাহল আর লোকের হুড়াহুড়ি যেন জোর একটা ধাক্কা মারল ওদের। আশা করেছিল, সুমাতো কমিকের মতই এখানেও দেখবে ভাঙা মেলা, লোকজন কম, সবাই পোটলাপুঁটলি গোছগাছ করে বাড়ি ফেরার তোরজোর করছে।

দুই রঙা চুলওয়ালা মেয়েটার শোচনীয় অবস্থা। কুলিয়ে উঠতে পারছে না আর বেচারি। একই সাথে দুটো কাজ করতে হচ্ছে। হাতে সিলও মারতে হচ্ছে, দারোয়ানের কাজও করতে হচ্ছে। ফুরসত পেলেই তাকাচ্ছে এদিক ওদিক, নিশ্চয় নরিসকে দেখার আশায়। নরিস যে আর ফিরবে না, জানলেই মুষড়ে পড়বে মেয়েটা, তাই তাকে কিছু বলল না কিশোর।

এবার? কনভেনশন ফ্লোরে ঢুকেই জিজ্ঞেস করল রবিন।

আমাদেরকে দেখে ফেলার আগেই তাকে খুঁজে বের করতে হবে আমাদের, মুসা বলল। গরিলাটাকে পাঠিয়েছে আমাদেরকে বন্দি করার জন্যে। এখন আমাদেরকে ঘুরঘুর করতে দেখলেই সন্দেহ করে বসবে।

ঠিক, একমত হয়ে বলল কিশোর। মরগানকে খুঁজে বের করতে হবে, চোরাই কমিকগুলোও বের করতে হবে।

এই তো, পেলাম, শোনা গেল বাজখাই কণ্ঠ। মোটা শরীর দিয়ে ধাক্কা মেরে ভিড় সরাতে সরাতে এগিয়ে এল ডুফার। খুব উত্তেজিত লাগছে! ব্যাপারটা কি?

খপ করে তার হাত চেপে ধরল হুফার। এড, মরগানকে দেখেছ?

হাসিতে দাঁত বেরিয়ে পড়ল ডুফারের। দাড়ি নেড়ে বলল, ঠিকই আন্দাজ করেছি! খুব উত্তেজনা। হয়েছেটা কি? আবার কিছুতে হাত দিল নাকি?

সে হাসছে, আর কিশোর ভাবছে মরগানের হাতের কথা। ডাকাতির পর পর হাজির হয়েছে লোকটা, লম্বা আঙ্গুলওয়ালা পাতলা হাতজোড়া ডলতে ডলতে। ওই হাতের উল্টো পিঠে সিল ছিল না। কনভেনশন বস হিসেবে তার টিকেট লাগে না।

মরগানের হাত ডাকাতটার হাতের সঙ্গে মিলে যায়, কিশোর বলল, ওর হাতেও কোন সিল নেই। আমার বিশ্বাস, ডাকাতিটা সে-ই করেছে। কিন্তু দুজন লোক তাকে গোল্ড রুমে যেতে দেখেছে, ভাকাতির সময়। ভুরু কোচকাল কিশোর। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল একবার। ভাবছে।

আমি তাকে গোল্ড রুমে দেখেছি, ডুফার বলল। ঘরে ঢুকে ঘ্যান ঘ্যান করতে লাগল প্রোজেকশনিস্ট তখনও আসেনি বলে। সে নিজেই প্রোজেকটরটা চালানোর চেষ্টা করল, পারল না। যন্ত্রটা এমনকি পর্দায় দিকেও সেট করা ছিল না, যে ছবি ফেলা যাবে। মজার কাণ্ড করেছে। ওটাকে চালানোর জন্যে ব্যাগ ব্যবহার করেছে সে।

ব্যাগ? কিসের ব্যাগ? জানতে চাইল কিশোর।

শ্রাগ করল ডুফার। কাঁধে একটা ক্যানভাসের ব্যাগ ছিল। এই কনভেনশনের অর্ধেক লোকের কাঁধেই ওরকম ব্যাগ আছে।

মুসা বলল, কিন্তু আমাদের সাথে যখন দেখা হলো, তখন ছিল না।

রবিন যোগ করল, আর সেটা ডাকাতির বেশি আগেও নয়।

আসল কথা হলো, কিশোর বলল, কি ছিল ব্যাগটার ভেতর?

তোমার কি মনে হয়? মিরিনার প্রশ্ন। কসটিউম?

হতে পারে, ভ্রূকুটি করল কিশোর। কিন্তু সময়ের ব্যাপারটা মিলছে না। পোশাক খুলে এত তাড়াতাড়ি গোন্ড রুমে পৌঁছল কি করে?

ভাল প্রশ্ন, মুসা বলল। গোল্ড রুমে দেখা দরকার। এসো।

দল বেঁধে রওনা হলো সবাই। কনভেমশন ফ্লোর থেকে বেরিয়ে প্রথমে বাঁয়ে মোড়, তারপর আরেকবার বাঁয়ে মোড় নিতে লম্বা একটা করিডর পড়ল।

একটা ব্যাপার খেয়াল করেছ? হুফার বলল, কনভেনশন ফ্লোরে এদিক দিয়ে যাওয়ার পথটা বড় জটিল। বেশি ঘোরপ্যাচ।

শেষ মাথায়, ডানে গোল্ড রুমের প্রবেশ পথ। বন্ধ দরজার ওপাশ থেকে আসছে জমজমাট বাজনা। চিৎকার করল একটা মহিলা কণ্ঠ, গান নিয়ে একটা মন্তব্য করল।

বাঁয়ে আরেকটা দরজা, তাতে ডোরনব নেই। ঠেলা দিল কিশোর। নড়ল না পাল্লা। এটা দিয়ে কোথায় যাওয়া যায়? নিজেকেই যেন করল প্রশ্নটা।

এটা একটা ইমারজেন্সি একজিট, ডুফার বলল। জরুরি অবস্থায় বেরোনোর পথ। এর অন্য পাশেই কনভেনশন ফ্লোর।

দরজায় কান পেতে ওপাশে অসংখ্য মানুষের নড়াচড়া আর কোলাহল গুনতে পেল কিশোর। চকচক করে উঠল চোখ। তাহলে এই ব্যাপার। এটা দিয়ে সহজেই কনভেনশন ফ্লোর থেকে ডাকাতি করে বেরিয়ে আসতে পেরেছে ক্রিমসন ফ্যান্টম। মিস্টার ডিকসনের দোকান থেকে খুব কাছেই হবে মনে হয়।

তার পরেও কথা থাকে, প্রশ্ন তুলল হুফার। কাপড় বদলাল কোথায় সে?

যেখানে ডাকাতি করেছে সেখানেই, জবাব দিল কিশোর। পোশাক বদলের ঘর তো ওখানেই তৈরি করে নিয়েছিল। ধোঁয়া ধোঁয়ার মধ্যেই কাজটা সেরেছিল। মিরিনার দিকে তাকাল গোয়েন্দাপ্রধান। ধোঁয়ার ভেতরে তাকিয়ে কি দেখতে পেয়েছিলে তুমি, বলো তো আবার?

শ্রাগ করল মিরিনা। এক ঝলক লাল। মনে হলো কাঁধের ওপর। ধোয়ার ভেতরে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে তখন সে।

মাথা ঝাঁকাল কিশোর। কোন দিকে গিয়েছিল?

ভেবে নিল মিরিনা। তখন তো মনে হয়েছিল, মানে আমি ভেবেছি আরকি, সামনের দরজার দিকেই গেছে। এখন মনে হচ্ছে, এই দরজাটার দিকেও আসতে পারে।

হাসল কিশোর। লাল ঝিলিকের মানে হতে পারে, তখন ওটা খুলে ফেলছিল মরগান, ব্যাগে ঢোকানোর জন্যে। কমিক ভরে আনতে যে ব্যাগটা সাথে করে নিয়ে গিয়েছিল।

ডুফার বলল, কিন্তু ডাকাতির আগের ক্ষণে যে তাকে আমি গোন্ড রুমে দেখেছি..

বাধা দিয়ে বলল কিশোর, তা দেখেননি। ডাকাতির খবর শোনার আগের মুহূর্তে তাকে দেখেছেন, ডাকাতি হওয়ার আগের ক্ষণে নয়।

দ্বিধায় পড়ে গেল ডুফার। তাই তো! এটা তো হতেই পারে…হয়তো ঠিকই বলেছ তুমি বুঝতে পারছি…

আমি পারছি না, মুসা বলল।

সামনের দরজা দিয়ে ডাকাতির খবরটা বাইরে বেরোতে মিনিট দুই লেগে গেছে, বুঝিয়ে দিল রবিন।

ঠিক। কিশোর আরও ব্যাখ্যা করে বোঝাল, পাশের দরজা দিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল মরগান, খবরটা হলরুম থেকে বাইরে বেরোনোর আগেই। ছুটে চলে এসেছিল গোন্ড রুমের কাছে। যাতে তাকে লোকে দেখতে পায়, অ্যালিবাই তৈরি হয়, তাকে সন্দেহ না করতে পারে কেউ।

থামল কিশোর। এক আঙুল তুলল। আর একটা ভিন্ন সূত্র রয়ে গেল। সাথে করে ব্যাগটা গোল্ড রুমে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা। ভাবছি, এখনও প্রোজেকটরের গায়ে কোথাও ঝুলছে না তো?

হুফার বলল, গিয়ে দেখলেই তো হয়।

সব চেয়ে ভাল হয়, কিশোর বলল, মরগান যদি যায়। গিয়ে বের করে আনুক ওটা। এক কাজ করা যাক। প্রোজেকশনিস্টকে দিয়ে একটা খবর পাঠানো যাক তাকে।

প্রোজেকটর চালাচ্ছে এখন পিটার, আমার বন্ধু, ডুফার বলল। ওই যে, আমাদের পাশে বসে খাচ্ছিল যে লোকটা সেদিন।

বুঝতে পেরেছি, কিশোর বলল।

তাকে দিয়ে কিছু করানো যায় না?

খবর পাঠাতে চাও তো? যাবে। কি বলতে হবে?

প্রোজেকটর ভীষণ গরম হয়ে গেছে, আগুন লেগে যেতে পারে, হাসল কিশোর, এরকম কিছু?

Categories:

This is a demo store for testing purposes — no orders shall be fulfilled. Dismiss